বাক্‌ ১১০ : জিষ্ণু মুখার্জি



বাঃ বারো

তারপর একটা লোক এসে যখন অরুণের চোখ থেকে কাপড়টা খুলল তখন সবটা মনে পড়ল অরুণের। চন্দ্রিমা 'সনমান' বলে, ২০১ এ ঝুলতে ঝুলতে একদিন বিমলের মনে হল বহুদিন পেন,পেনসিল ব্যবহার করার কারণ খুঁজে পায়নি সে,শুধুই টাইপ করেছে
-১০টাকায় ৪টে,আজ আপনি এটার সাথে পেয়ে যাচ্ছেন আরও একটা...
১০টাকায় ৫টা পেন কিনে বিমল যখন বাস থেকে নামল তখন সোয়া বারোটা,আধঘণ্টা আগে তার আপিসে ঢোকার কথা ছিল।



-শোন,আগে সনমান দিয়ে কথা বলাটা শেখ...
-সম্মান
-ছোটলোক কেন রে তুই এত?মাস্টারী করতে চাইলে টিউশনিটাই করাতিস মন দিয়ে
-সম্মান
-সনমান
-বাঁড়া তোরা থামবি?

"দেখুন,মানে sorry,শুনুন,আমাকে আপনি চিনবেন না, মানে আপনি যদি আমাকে এখন দেখতে পেতেন, মানে ইয়ে কাপড়টা যদি না থাকত চোখে, বাঁধা,তাহলেও লাভ হত না খুব একটা, তাই শুনুন,শুনলেই আপাতত চলবে,আপনার বাবা শ্রী বরুণ চ্যাটারজী, আসলে লোকটা তিনি বদ, প্রচুর টাকা ওনার, কিন্তু মাছের বাজারে, sorry sorry, আপনি কি একটা সিগারেট...না...আচ্ছা..."

বিমল ও চন্দ্রিমার মধ্যে এরকম কিছু কথাবার্তা হয়েছে।
-এই দ্যাখো...পাঁচটা পেন
-
-এই শোন...পাঁচটা পেন
-
-আজ কিছু লিখব
অরুণ যেদিন তার বাবার সাথে মাছের বাজারে গেছিল সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার,আজ বুধবার, বরুণবাবু একা। চন্দ্রিমা অপেক্ষা করছে রায়ার জন্য, রায়া অপেক্ষা করছিল সঞ্জীবের জন্য,ও এলে বাইকে চেপে ওরা যখন বাজারে পৌঁছল বরুণবাবু ততক্ষণে চন্দ্রিমাকে দেখে ফেলেছেন।কাল অরুণের সাথে বরুণবাবুর মাছের বাজারে এসে মাছ অর্ডার দেওয়ার কথা।অরুণের সাথে চন্দ্রিমার বিয়ে ১৫ই মার্চ রায়া সঞ্জীবকে একটা গুঁতো মারে আর ফিসফিস করে বলে চাঁদু তুমি কি একটু জোরে চালাতে পারো না।

"তাহলে আমি একটা ধরাই নাকি? শুনুন, মাছের বাজারে আপনার বাবাকেই তোলার কথা ভেবেছিলাম আমরা। কিন্তু ওনাকে যে খুনের পরিকল্পনা চলছে...শুনুন, আমরাও খুবই shocked, লোমহর্ষক ঘটনা তো ঘটে না, ঘটে কী লেখা ছিল আপনার বাবার সেটা তো আমার জানার কথাও না...শোন্‌,দু লাখ তো লাগবেই,দুদিন সময় দিলাম। দ্যাখ্‌ কিভাবে...
                      
গুলিটা বিমলের মাথা ঘেঁসে বেরিয়ে যায়।বেঁচে যায়,শুধু বিমল আর চোখে দেখতে পায় না।সে ও অরুণ সেই সুযোগটা নিয়েছে...বহুদিন...শুধু একদিন দুপুরবেলা
-সম্মান
-তোর মরা বাপকে কর গিয়ে সনমান কুত্তা
বিমল শুনতে পেয়েছে সেটা সে বুঝতে পারে। রাতে। বিমলের খাতায় চন্দ্রিমা দ্যাখে লেখা আছে চন্দ্রিমা খানকী। লেখা নেই,অক্ষরগুলো ছাপ ফেলে গেছে শুধু।একটা পেনেও কালি পড়ে না,কানাচোদা খানকীর ছেলে সেটা তুমি দেখনি। বিমল বুঝতে পারে সে থকেছে।২০১এ তাকে ঠকিয়েছে...
-মা বাবা না তুললেই নয়?
-চন্দ্রিমা খানকী ছাড়া যে হিসিটুকুও করতে পারবি না


-শুনুন, ভেটকির ফিলে তো লাগবেই,আপনি দিতে পারবেন কিনা বলুন,নয়তো
-দাদা ভেটকির সাপ্লাই নেই, ইলিশের পাতুরী করে দিন
-বাবা আমি একটু আসছি
রায়াকে বিমল জানিয়ে দিয়েছে যে সঞ্জীব আসবে না বলেছে।এটাও জানিয়েছে সঞ্জীব বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল লাইব্রেরী যায় বিকেল পাঁচটা নাগাদ।আজও যাবে।এখন চন্দ্রিমা সময়মতো পৌঁছলেই
-আরে বিমল
-অরুণ
-তুই এতদূরে
-ভেটকির ফিলে কিনব ভাই,আমাদের ওখানকার বাজারে নেই, দেখি এখানে যদি
-নেই ভাই, এখানেও, আচ্ছা শোন, মেনুতে ইলিশ হলে চাপ হবে কি?
-দিস না
-কি
-order
-মানে
-অর্ডার দিস না, শ্রাদ্ধে মাছ হয় না
-আরে চন্দ্রিমা


রায়াকে বাজারে সকালে আসতে বারণ করে বিমল।বিকেলে সঞ্জীবকে মারতে গিয়েও মারে না সে।সঞ্জীবকে তার ভালই লাগে। চন্দ্রিমা যে বিমলকে গুলি করবে সেটা সঞ্জীব জানায় রায়াকে, রায়া আর সঞ্জীব বকখালি বেড়াতে চলে যায়।


১০
চন্দ্রিমা তারপর দৌড়য়।অরুণের জামায় বিমলের রক্ত। বিমল বলে তোর বাবাকে আজ মারতাম,বিয়েটা হত না, চন্দ্রিমা আমার রে। মাছমুখে মাছ হয়। অজ্ঞান বিমলের দিকে তাকিয়ে এটাই মনে পড়ে অরুণের।বাবার ফোন বেজেই চলে। বাজার থেকে বেরিয়েই কালীমন্দিরের পাশে একটা কালো ওমনি দাঁড়িয়ে ছিল। অরুণ যেমনি গেছে ওমনি বলা নেই কওয়া নেই কোথা থেকে একটা ছুরিওয়ালা হাত তার ঘাড়ে খোঁচা মারল।চন্দ্রিমাকে কেউ ধরতে পারেনি।


১১
চন্দ্রিমা খান কি বিমল গুরুং এর সাথে সুখে থেকেছিল? অরুণ চ্যাটারজী,চন্দ্রিমা খান,বিমল গুরুং এরা তিনজন কি ভাল বন্ধু ছিল? চন্দ্রিমা খান কেন বিমল গুরুংকে গুলি করেছিল? বরুণ চ্যাটারজীর এত টাকা কেন? অরুণ বিমলের থেকে দুলাখ টাকা চেয়েছিল কেন?বরুণ চ্যাটারজীকে গুলিটা কে করেছিল? বিমলকে হাসপাতাল কারা পৌঁছে দিল?বিমল অরুণকে দুলাখ টাকা কিভাবে দিল? অরুণ, চন্দ্রিমা, বিমল এরা তিনজন কি এরপরেও ভালো বন্ধু ছিল?চন্দ্রিমা খান রায়া মুনশীকে কেন বলেছিল সঞ্জীব চৌধুরীকে ভুলে যেতে? বিমলকে কেউ কেন ঠকাবে?বিমল ২০১এ কেন চড়ে? একজন অন্ধ লোককে কেউ কেন ঠকাবে? ২০১ বাসটা কোথা থেকে কোথায় যায়?


১২
ইত্যাদি




                                                                                  (চিত্রঋণ : Nguyen Dinh Dang)     

৫টি মন্তব্য: