বাক্‌ ১১০ ।। পুনরাধুনিক ভাবনা ও কবিতাগুচ্ছ ।। রেনেসাঁ




পুনরাধুনিক ভাবনা

শুরুর থেকেই শুরু করি আমি ২০১৬ সালেও কোবিতা লিখেছি সেগুলোতে অনেকের হাততালিও পড়েছে নিজেও বেশ খুশি হতাম সত্যিটা হল সেসব কোবিতায় ভাষার ব্যবহার থেকে শুরু করে এমনকি বক্তব্যের অনেকটাই জ্ঞানত ও অজ্ঞানত অন্যের ছিল কম মূল্যে যদি হাততালি পাওয়া যায়, এই আশা ছিল আমার অতীত মুছে ফেলা কোন কাজের কথা নয় আমি বরং বর্তমান ও ভবিষ্যত কে এতটাই সুন্দর, মেহনতি করতে চাই, যাতে অতীত একটা নিষ্ক্রিয় অ্যাপেনডিক্স হয়ে থেকে যায়


তারপর একদিন পুনরাধুনিক কবি অনুপম মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পড়াল একজন সত্যি বলছি, হজম করতে সময় লেগেছিল সেটা সম্ভবত ২০১৩ কি ১৪ আমার যেরকম কবিতা পড়ার অভ্যেস সেরকম ছিল না বলেই এই বদহজম কিন্তু ঐ কাটা জায়গাগুলো ঠিক যেন কেউ আমার এতদিনের অভ্যেস কে কাটছে দিন কে দিন খুঁজে খুঁজে পড়তাম পুনরাধুনিক কবিতা আমি মানুষ হিসেবে একজন ভীতু , অসচেতন ও অমানুষ টাইপের মেয়ে বাকের সাথে পরিচয় তারো পরে কয়েকদিন পড়াশোনার পর বুঝলাম আমি নিজের কাছেই সৎ নই তার চেয়েও বড় কথা, আমার নিজস্ব কোন কন্ঠস্বরই গড়ে ওঠেনি সেদিন ভেবেছিলাম, আর লিখব না, ও লেখা না লিখলেও এ পৃথিবীর কারো কিচ্ছু যাবে আসবে না কবিতা লেখার জায়গাটায় একদিন সৎ ও স্বনির্ভর হব এই আশা এলযেখানে লিখতে জানার শেষ , সেখান থেকেই লিখতে পারার শুরু ”-- পুনরাধুনিকের প্রথম গর্বিত পথিকের কথা

শুনে রাখুন, আমার কোন জ্ঞান নেই, বিজ্ঞানও কিচ্ছু জানি নি, আর যেটুকু ইতিহাস জানি সেও চাইলে আপনারা খন্ড খন্ড করে দিতে পারেন আমি সবার কথা শুনব না বরং আমার ভেতরের সত্যি আমাকে পথ দেখাবে

পুনরাধুনিক সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখলাম এই তো সত্যি, এই তো চাওয়া আপনারা যদি বলেন, তা কি কখনো হয়? হয়

অনেক কথাই তো প্রয়োজনীয় পুনরাধুনিক কিছু কথা বলে চলছে যে শুনতে পায় সেই শুনতে পায়

আমার কাছে পুনরাধুনিক মানে স্বনির্ভরতা নিজের ভেতর থেকে নিজের কথা নিজের কন্ঠস্বরে বলা ও শোনা এই যে চারিদিকে এত ভালোবাসা, এত দলবদ্ধ আক্রমণ; এর মাঝখানেই একেকজন বলেন , “লেখার জগতে ভালোবাসাটা দরকার কবিরা কবিদের আপনার মানুষ আমি কোনদিনই কাউকে আপনার বলি না  বলি, শুধু নিজেকে এ এক সার্থক স্বার্থপরতা আর কবিদের সামনে আমি শুধু কলম খুলতে অভ্যস্ত শেষের দিকে অনেকের সামনে আমি মন খুললেও মুখ খুলতে পারতাম না

এরপর মধ্যবর্তী বইমেলা সংখ্যা আমি পড়লাম স্বচ্ছ এক পথ

ভয়ঙ্করী ও ভীমা মা কালীর মত কাব্যজগত বাংলার তাই বলে কি সুন্দর নয়? কবি তো উপাসক মুরুব্বি নয়, মোসাহেবও নয় নিজের আবিষ্কার টা নিজেকেই করে নিতে হয় এটাই আমার কাছেপুনরাধুনিক সমস্ত বয়্যোজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গকে সসম্মানে নিবেদন করি -- যেদিন বড় হবেন সেদিন হবেন, আপাতত বড় হতে গিয়ে বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন

শেষে কৃতজ্ঞতা নিবেদনের একটা রীতি বা আচার থাকে সব গুড়ে বালি এই পৃথিবীটাই একদিন পুনরাধুনিক হবে, এটা বিশ্বাস বা শপথ নয়; প্রত্যাশা  নিন-

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উত্‍‌সমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়,
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি---
পৌরুষেরে করে নি শতধা, নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা,
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত



পুনরাধুনিক কবিতাগুচ্ছ



আমার ড্রয়িংরুম

দু-এক দিন দরজার পর্দার দিকে তাকালেই দেখতে পাই দরজার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকে যুবতী অন্ধকার ছিমছাম সুদীর্ঘ শরীর; কালচে সবুজ গাউন আমি ওর নাম দিই ঝর্ণাপাশে বোসবি?”

অদ্ভুত রকমের নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে সোফা, কাচের টেবিল, ফলের ঝুড়ি যেন এক্ষুনি শুরু হবে প্রিয় সিনেমা বৃষ্টি .........চুমু খেতে খেতে...... নেমে আসবে সকলখানে...

আসলে এইসব কিচ্ছু না ঠিক এক্ষুনি ইন্টারভ্যাল হয়ে যায়

......
...


কালচে সবুজ গাউন আঙুলে ধরে ঝর্ণা ঘুরে যায় অনেক ডিগ্রি ...তারপর পালায় পালায় অগোছালো
ঠিক এখুনি,

......



স্ক্রিপ্টের যা কিছু অবশিষ্ট,, দানার মত পড়ে আছে নীচে... ভোর চিবিয়ে নেবে সবকিছু......বাগানের প্রিয় বকুলফুলটিকেও  সন্তানসম্ভবা করে যাবে চটপট......



বহু বছর পরে এমন সিনেমা তৈরি হবে নাম দেব - “.....রাজবাড়ি এই আশায় ফাঁকা হলে হাততালি বাজাই আবার নিস্তব্ধ হয় সোফা, কাঁচের টেবিল, ফলের ঝুড়ি



স্লিপিং পিলস আর কী...

সুদূরে ...... একদিন ......দুটো বেশি বিড়ি পাবে বলে ......আনন্দে জোরে জোরে হাঁটছে ......... এক বুড়ো


আমি ......জানি না কীভাবে......ওঁর বাড়ির মাটি-দেওয়াল, ওঁর ভাঙা দাঁতে হাসি, পরনে লুঙি, গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি, কাঁধে গামছা...সেই গামছা চিপে বউ পা মুছিয়ে দিচ্ছেন... মেয়ে বকছে...এসব দেখে দেখে দেখে......ইসস,  ...... অনেকক্ষণ


আমার ঘর  ...এই সময় উদ্বায়ু ন্যাপথলিনের নেশার মত......বুড়ো টা তার সকল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়...... আমার বুকসেলফের ঐ পাশে...বুকসেলফ থেকে কয়েকশ কিমি দূরে......  বা, বুড়ো মারা গেছেন ৪ বছর...কন্যাটি বিবাহিতা...... বৃদ্ধা পরিচারিকা হতে চেয়ে ঘুড়ে বেড়ান আমার বাড়িতে...... বা, বুড়ো বুড়োই হননি সদ্য যুবক হয়ে আসা কৃষক ঘামের তীব্র গন্ধ নিয়ে ক্ষেতে চলেছেন; পাশেই নদী, স্নান করেছেন জলে আর জলের মতো সুতো নিয়ে বালিশের ঢাকনা সেলাচ্ছেন নববধূ...... এরকম সব দৃশ্য হাতের তালুতে নিয়ে ............ ঐ নদীতে চেপে আমি ...... আবছা  দূরত্বে...


এদিকে আমার ঘরে সবাই সবার গল্পের সাথে প্রতীক্ষায়..

আমি পারব না আফশোস

বুড়ো, তার মেয়ে, স্ত্রী সবাই ততক্ষণে অন্ধ ......... আমার বাড়ির সবসময়ের পরিচারক  রামুদা ওঁদের ফেরার নৌকায় তুলে দেবে..................ঘাটপার মাঝিদের ভীড়... তাদের গল্প আরো কত যাত্রী ...ওঁদের গল্প...... আমার ঘর থেকেই ফিরছে ফাঁকা হাতের তালু নিয়ে


জয় রাধে দুগগা দুগগা তলিয়ে যাক তলিয়ে যাক......আর যেন না দেখি কাউকে...




রক্তজালিকা

পিরিয়ডস.......লাল রাজপ্রাসাদ..আঁকড়ে ধরছে ...



শরীরের ভেতরে শরীরমহল ...   ... সেখানে উঠোনে কিনারে রেখে দিয়েছি সন্ধ্যা আর একটা হালকা হালকা ন্যাপকিন আর একটু অন্ধকার...... দুটোই চলে যাবে ...


উঠোনে তুফান......
শরীর চেটে দেয়......হাওয়া ... লহমায়



আসলে এই সব জানালা আলতো করে খোলে না বহুদিন..

শুধু ধাক্কা দেয়...... পলেস্তারা খসে খসে.....................


হৃদয় যার মুচড়ে গেছে ......তার শরীর পুড়লে কী বা হয়...




ঝর্ণা

ছায়ায়...সুগন্ধি মোম

প্রবালের মতো ওল্ড মংক উপচে পড়ছে

চাঁদের বুক বেয়ে দুধ......



টিভিতে কিশোরী নায়িকা ছুটে যাচ্ছে......
প্রেমিক......


আমার এখন ঐ কিশোরী নায়িকাটির মত করে হেসে উঠতে মন চাইছে


ঝর্ণা বলেছিল... পৃথিবীর তাবড় তাবড় আস্তিক, তার্কিক, রক্ষণশীলদের
প্রমাণ দিয়ে যাবে এক ধর্মবিশ্বাস আছে ওর প্রেমে


ঝর্ণা এখন লাল নৌকো ঘাঁটে বেঁধে রাখছে
আমায় নিয়ে ভেসে যাবে বলে



পৃথিবী

মাটি উঠে গেছে... রাস্তা...


বাউল গ্রাম
যাযাবর ডাকঘর উড়ে যায়


অমলতাসের মতো একা ......


হাঁক ছেড়ে ফিরে যাই

এখানে আমার মত কেউ নাই
এখানে আমারই মত সবাই...”

[*** শেষ দুই পংক্তির মূল দর্শন কবি অভিষেক ঘোষের]



জিন্দেগি

কচুবনের মেলা...
যাইনি কোনদিনই


মাটির খেলনা, ছোট ছোট মুর্তি এনে দিত টুম্পাদির মা

সংসার করতে যা যা লাগে

সবই ছিল প্রেমিকও ছিল মনে মনে


ভাত চড়াতাম সিনেমার মত প্রেমিক এসে শরীরে হাত দিত

ব্রেকফাস্ট বানাত খেতে ডাকত




মেলা উঠে গেছে ......




আত্মসমর্পণ

বাসন মাজার আওয়াজ আসলে মনমরা হওয়ার আওয়াজ...

ভরদুপুরে বাইকের শব্দে লেগে আসা চোখ ভেঙে আসে



বিছানার চাদরের ওপর মৃতদেহ ঘুমায়, হাই তোলে, উঠে বসে...
মরে গেছি



ভোর

হারমোনিয়াম এর মতো
বকুল ফুটছে ভোরে


ফুসফুস হয়ে উড়ে যাবে টুথপেস্টের ফেনা


বেসিন থেকে বেসিনে বকুল মিশে যাচ্ছে...



                                                                        (চিত্রঋণ : বত্তিচেল্লি এবং কবি রেনেসাঁ)

৪০টি মন্তব্য:

  1. উঠোনে তুফান.....
    শরীর চেটে দেয়..... হাওয়া..... লহমায়

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আসলে এই সব কথা আলতো করে বলে না কেউ বহুদিন।
      আসলে এইসব জানালা আলতো করে খোলে না বহুদিন।

      মুছুন
    2. ধন্যবাদ অঙ্কনদা - রেনেসাঁ

      মুছুন
  2. Every single line touches heart....

    উত্তরমুছুন
  3. Every single line touches heart....

    উত্তরমুছুন
  4. বদলানো এই পৃথিবীতে, বদলাচ্ছে সবই
    কবিতাও বদলাক নতুন করে, আমরা সাক্ষী রবই।...

    উত্তরমুছুন
  5. sliping pills ar ki? bakituku na hoy pore pore janabo

    উত্তরমুছুন
  6. ব্যাখ্যাতীত মগ্নতা !

    উত্তরমুছুন
  7. biral ta sobar age bhalo, tarpor fuler jhuri, ebar fatayadiso....... sobkichu mile,,,,@avishek

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হ, বুঝসি। ভাল লাগল আমার। ধইন্যবাদ

      মুছুন
  8. পড়লুম । ছোটো হতে-হতে বুড়ো হয়ে গেছি রে । ধরে ফেলেছিস দেখছি ।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. এখনো বোধ হয় আপনি বুড়ো হননি। বড়ই আছেন। - রেনেসাঁ

      মুছুন
  9. তোমার গদ্য আর কবিতা পড়লাম, রেনেসাঁ। নিজেকে পাল্টিয়ে নেবার এই তাড়না কবির থাকতে হয়। কবিতাগুলো ভালো লাগলো। মুগ্ধতা...

    উত্তরমুছুন
  10. দারুণ একটা কেটলী এবং একটা অসহ্য উনুন পেয়েছো, এদের সহবাসে তুমি উর্বর হতে থাকো, এই আশাই করব ..কবিতা গুলো দারুণ

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হ্যাঁ। উর্বর হতে থাকি। ধন্যবাদ। - রেনেসাঁ

      মুছুন
  11. অভ‌িনন্দন র‌েঁনেসা। ভাল‌ো বলছ‌ি না,,,খারাপ বলার ধৃষ্টতা ন‌েই..শুধু বলব শুরুটা অসাধারণ সামল‌েছ। এগ‌িয়ে যাও। শুভকামনা।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. অনেক ধন্যবাদ দিদি। এগিয়ে যাওয়া যাক - রেনেসাঁ

      মুছুন
  12. পড়লাম রেনেসাঁ। তোমার অকপট ভাষ্য ভালো লাগল বেশ। আর কবিতাগুলোও। তুমি যে পথে পা রেখেছ, সেই পথে তোমার সাফল্য আসুক। ছোট্ট ছোট্ট ভাবনার পুনরাধুনিক বিন্যাস ভালো লেগেছে, বলাই বাহুল্য। কোথাও কোথাও গল্প এসে ধরা দিচ্ছে। বেশ উপভোগ্য। এগিয়ে চলো।

    উত্তরমুছুন
  13. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  14. প্রথমটি বেশ ভালো লাগলো, মনে হচ্ছিল আমিই তো এসব লিখতে চেয়েছি, আফসোস...। অন্যগুলোতে আলাদা ভালো লাগা খুঁজে পেলাম রিয়েলি.....সব মিলেয়ে চমৎকার।

    উত্তরমুছুন
  15. কবিতাগুলো দুরন্ত।কিছু বলার নেই।তবে ঝগড়া কন্টিনিউ থাকছে,পুনরাধুনিক ভাবনা নিয়ে।ওটা থাকবে আনটিল আই গেট কনভিন্সড।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হু। কবিতাগুলোও পুনরাধুনিক। - রেনেসাঁ

      মুছুন
  16. কবিতাগুলি ভালো লাগলো।নিজস্ব স্টাইল চিহ্নিত মনে হয়েছে

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ আপনাকে অনেক। - রেনেসাঁ

      মুছুন