।। মহানন্দা ।।
রোহিত যখন চোখ খুললো
তখন রাত কত হবে কে জানে। হাতের ঘড়িটার পাত্তা নেই। কেউ খুলে নিয়েছে বোধহয়, নাহলে মহানন্দায়...
ভিজে বালিতে সে একা শুয়ে। ঠান্ডা হাওয়া।
সে এখানে এলো কী
করে?
দুধের ঘন স্বরের মতো মাথাটা যেন আচ্ছন্ন। মহানন্দার জলে কুলকুল একটা শব্দ। খুব মিষ্টি
লাগছে। হঠাৎ রোহিতের খেয়াল হলো তার কিচ্ছু মনে পড়ছে না। সত্যিই তো! এখন
কি করবে সে? তার বাড়ি কোন পাড়ায়? বাড়িতে কি বাবা মা আছে? নাকি বউ...
ওহ্ ! মাথার ভেতরে কেমন একটা অসহ্য ব্যথা
করে উঠলো এসব চিন্তায়। খুব ক্ষিদে পেয়েছে। এখন সে খাবার পাবে কোথায়? পকেটে হাতড়ালো রোহিত। নাহ!
রুমাল - মানিব্যাগ - মোবাইল কিচ্ছু নেই, সব ভোঁভাঁ।
আচ্ছা
সে এখানে কতক্ষণ ধরে পড়ে আছে? নাকি কতদিন ... সে আদৌ
বেঁচে আছে তো! একটা হিমশীতল ভয় গলা দিয়ে পেটের ভেতর সুড়সুড়
করে
নেমে এলো। জলে কীসব ভাসছে। কাঠামো? একটা মুখ মনে হচ্ছে না? আচমকা একটা
পরিচিত মুখ মনে ও নদীতে একইসঙ্গে ভেসে উঠলো ... লাবণী? না না তা কি করে হয়! এতো মনে হচ্ছে দূর্গা প্রতিমার মুখ। তবে কি আজ ভাসান ছিল? দশমী? সে কি কোনো
অ্যাক্সিডেন্টে পড়ে এই স্মৃতি হারিয়ে ... না না কিচ্ছু
মনে পড়ছে না। তবে দূর্গা দেখে সময়ের কিঞ্চিৎ ধারণা মিলল। কিন্তু মনের মধ্যে অজানা একটা
ভয় ক্রমশ দানা বাঁধছে। হারিয়ে যাওয়ার ভয়।
ফোবিয়া?
এই ফোবিয়া টাকে কী বলে যেন?
পাগলের
মত বালি হাতড়াতে লাগলো সে। কাঠামো টা ভেসে পাড়ের দিকে আসছে, ওহ্ রোহিত এখন কি করবে ... ক্ষিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছে,
বালি হাতড়াতে হাতড়াতে ভয়ানক জোরে পিছাতে লাগলো রোহিত। কাঠামোটা পাড়ে
আসার আগেই - মনের শেষ জোরটাকে প্রয়োগ করে সে উঠে দাঁড়ালো।
ঐ তো ব্রীজের আলো, যেভাবেই হোক এই অন্ধকার ছেড়ে ওখানে পৌঁছতেই
হবে। প্রানপনে দৌড়তে লাগলো রোহিত - হাঁফিয়ে
উঠছে সে, জামার বালি লাগা হাতায় মুখটা মুছে নিলো . . . ওহ্ কী যন্ত্রণা! মাথায় -পেটে ... তার কি বাড়িতে কেউ আছে? যদি থাকে তারা
কি এতক্ষনে রোহিতের
নিরুদ্দেশে দু:শ্চিন্তায় পুলিশে খবর দেয়নি? আশ্চর্য পুলিশের নামটা মাথায় এলো অথচ ...
ব্রীজে
তো পৌঁছনো গেলো,
কিন্তু এখন সে কী করবে? খাঁচায় বন্দী ইঁদুরের মতো চারদিকে তাকাচ্ছে রোহিত। সব দিকেই ছুটে আসছে খোলা হাওয়া - কিন্তু কোনোদিকেই সে যেতে পারবে না। সে এমন খাঁচায়
বন্দী হয়ে পড়েছে যার কোন দেওয়ালই নেই... ব্রীজ থেকে ঝুঁকে নিচের অন্ধকারে
তাকালো রোহিত। তারাদের ফোঁটা ফোঁটা আলো। দূর্গাকাঠামোটা পাড়ে এসে ঠেকেছে।
ব্রীজের ঐ
ধারে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে না?
ওর শরীরের গঠনটা খুব চেনা
ঠেকছে।
আবার
সেই মাথার দপদপ -
ব্ল্যাক আউট ... মাথাটা ছিঁড়ে
পড়বে যেন। অজস্র জ্যামিতিক চিহ্ন মাথায় ছোটাছুটি করছে - পেটের ভেতর ব্ল্যাকহোল ... একটা গাড়ি দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে এদিকেই
...
রোহিত
চোখ বুজলো।
(চিত্রঋণ : Colette V Hera Guggenheim)
porlam bhai,,,,,, sesh ta dhakka marlo chokh bujhtei.......@avishek
উত্তরমুছুনধন্যবাদ দাদা
মুছুনঅনেক সম্ভাবনা। গল্পটার। আপনারও...
উত্তরমুছুনভালো লাগলো রে!লেখ আরও।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ অমিত দা
মুছুন